গ্রাম আদালতের বিধিমালা, ১৯৭৬ বিধি-১ (সংক্ষিপ্ত নাম ও প্রারম্ভ) অত্র বিধিমালা ১৯৭৬ সনের গ্রাম আদালত বিধিমালা নামে অভিহিত হইবে । বিধি-২ ( বিষয়বস্তু বা প্রসংগে বিপরীত কিছু না থাকিলে অত্র বিধিমালায় ) (ক) ''ফরম'' বলিতে অত্র বিধিমালার সহিত সংযোজিত ফরম বুঝাইবে । (খ) ''অধ্যাদেশ'' বলিতে ১৯৭৬ সনের গ্রাম আদালত ''অধ্যাদেশ (১৯৭৬ সনের ৬১ নং অধ্যাদেশ) বুঝাইবে; (গ) 'খণ্ড' বলিতে অধ্যাদেশের তফসিলের কোনো খণ্ড বুঝাইবে; (ঘ) ''আবেদনকারী'' বলিতে যে ব্যক্তি অধ্যাদেশের ৪ ধারা অনুসারে কোনো দরখাস্ত করে, তাহাকে বুঝাইবে; (ঙ) ''প্রতিবাদী'' বলিতে যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেহ অধ্যাদেশের ৪ ধারা অনুসারে কোনো দরখাস্ত করে, তাহাকে বুঝাইবে; এবং (চ) 'ধারা' বলিতে অধ্যাদেশের কোনো ধারা বুঝাইবে । বিধি-৩ : (১) ৪ ধারার (১) উপধারা অনুসারে কোনো দরখাস্ত লিখিতভাবে করিতে হইবে এবং উহা আবেদনকারী কতৃর্ক স্বাক্ষরিত হইবে ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট দাখিল করিতে হইবে । (২) উপবিধি (১) অনুসারে লিখিত দরখাস্তে নিম্নলিখিত বিবরণগুলি থাকিতে হইবে; যথাঃ (ক) যে ইউনিয়ন পরিষদে দরখাস্ত করা হইতেছে উহার নাম; (খ) আবেদনকারীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান; (গ) প্রতিবাদীর নাম, পরিচয় ও বাসস্থান; (ঘ) যে ইউনিয়নে অপরাধ সংঘটিত বা নালিশের কারণ উদ্ভব হইয়াছে উহার নাম; (ঙ) নালিশ অথবা দাবির প্রকৃতি ও তায়দাদ, সংক্ষিপ্ত বর্ণনাসহ; এবং (চ) যেই সমস্ত প্রতিকার দাবি করা হইতেছে । (৩) এই বিধি অনুসারে দরখাস্ত তফসিলের প্রথম খন্ড সংক্রান্ত হইলে দুই টাকা ফী এবং দ্বিতীয় খণ্ড সংক্রান্ত হইলে চার টাকা ফী দরখাস্তের সহিত দাখিল করিতে হইবে । বিধি-৪ : ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যখন ৪ ধারার (১) উপধারা অনুসারে দরখাস্ত প্রত্যাখ্যান করিবেন, তখন উহার উপর প্রদত্ত আদেশ সহকারে দরখাস্তটি আবেদনকারীর নিকট ফেরত দিতে হইবে । বিধি-৫ : (১) প্রত্যাখ্যানের তারিখ হইতে ৩০ দিনের মধ্যে ৪ ধারার (২) উপধারা অনুসারে রিভিশনের দরখাস্ত এখতিয়ারসম্পন্ন সহকারী জজ-এর নিকট দাখিল করিতে হইবে । (২) উপবিধি (১) অনুসারে দরখাস্ত লিখিত ও বাদী কতৃর্ক স্বাক্ষরিত হইতে হইবে । উহাতে পক্ষগণের নাম, বিবরণ ও ঠিকানা থাকিতে হইবে এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যে মূল দরখাস্ত প্রত্যাখান করিয়া ফেরত দিয়াছিলেন তাহাও এই দরখাস্তের সহিত দাখিল করিতে হইবে । যেই সকল হেতুবাদে রিভিশন দরখাস্ত করা হইতেছে, সংক্ষেপে তাহাও দরখাস্তে উল্লেখ করিতে হইবে । বিধি-৬ : যে সহকারী জজের নিকটে ৪ ধারার (২) উপধারা অনুসারে দরখাস্ত করা হইবে, তিনি যদি এইরূপ অভিমত পোষণ করেন যে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃর্ক প্রদত্ত আদেশটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত বা বহুলাংশে অন্যায়, তবে তিনি দরখাস্ত গ্রহণ করার জন্য চেয়ারম্যানের প্রতি নির্র্দেশ সম্বলিত লিখিত আদেশ দান করিবেন এবং অনুরূপ আদেশসহ আবেদনকারীকে উহা ফেরত দিবেন । বিধি-৭ : (১) আবেদন গৃহীত হইলে ১নং ফরমে রক্ষিত রেজিস্টারে উহার বিবরণসমূহ লিপিবদ্ধ করিতে হইবে এবং উক্ত রেজিস্টারে মামলার যে নম্বর ও বত্সর লিপিবদ্ধ হইবে, তাহা দরখাস্তের উপরেও লিখিতে হইবে । (২) যখন ৮ ধারার (২) উপধারা অনুসারে থানা ম্যাজিস্ট্রেট বা সহকারী জজ কোন মামলা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাইবেন, তখন তাহা ১নং ফরম রেজিস্টারে নূতন করিয়া তালিকাভুক্ত করিতে হইবে এবং নূতন মামলা হিসাবে উহার শুনানি করিতে হইবে । বিধি-৮ : (১) ৭ বিধি অনুসারে দরখাস্ত রেজিস্ট্রি করিবার পর চেয়ারম্যান একটি নির্দিষ্ট তারিখে ও সময়ে হাজির হওয়ার জন্য আবেদনকারীকে নির্দেশ দিবেন এবং উক্ত নির্দিষ্ট তারিখে ও সময়ে হাজির হওয়ার জন্য প্রতিবাদীকে সমন দিবেন । (২) এই বিধিমালা অনুসারে প্রদত্ত সকল সমন দুই প্রস্থে লিখিত এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃর্ক স্বাক্ষরিত ও সীলমোহরাঙ্কিত হইকে হইবে, এবং গ্রাম আদালত গঠিত হওয়ার পর গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান কতৃর্ক স্বাক্ষরিত ও সীলমোহরাঙ্কিত হইতে হইবে । (৩) যেক্ষেত্রে অন্যরূপ বিধান করা হইবে তদ্ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে অত্র বিধিমালা অনুসারে প্রদত্ত প্রত্যেকটি সমন ইউনিয়ন পরিষদের একজন কমচারী কতৃর্ক অথবা ইউনিয়ন পরিষদ বা গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান কতৃর্ক এতদুদ্দেশ্যে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি কতৃর্ক জারিকৃত হইতে হইবে । (৪) সমন দ্বারা যে ব্যক্তিকে আহবান করা হইয়াছে, সম্ভব হইলে ব্যক্তিগতভাবে সেই ব্যক্তির হাতে দুই প্রস্থ সমনের এক প্রস্থ অর্পণের দ্বারা সমন জারি করিতে হইবে । (৫) যাহার উপর সমন জারি করা হইবে, সেইরূপ প্রত্যেক ব্যক্তি সমনের অপর প্রস্থের বিপরীত পৃষ্ঠায় স্বাক্ষরের দ্বারা প্রাপ্তি স্বীকার করিবে । (৬) যথারীতি চেষ্টা করিয়াও যদি উপরোক্ত উপধারাসমূহের বর্ণিত উপায়ে সমন জারি করা সম্ভব না হয়, তাহা হইলে সমন প্রাপক যে গৃহে সচরাচর বসবাস করে, সমন জারি কারক কর্মচারী সেই গৃহের কোনো প্রকাশ্য অংশ এক প্রস্থ সমন লটকাইয়া দিবে এবং তদ্বারা সমন যথাবিহিতরূপে জারি হইয়াছে বলিয়া বিবেচিত হইবে । (৭) যে ব্যক্তির নামে সমন দেওয়া হইয়াছে, সেই ব্যক্তি যদি সেই ইউনিয়ন পরিষদের এখতিয়ার বহির্ভুত স্থানে বসবাস করে তবে ইউনিয়ন পরিষদের বা গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান ডাকযোগে (প্রাপ্তি স্বীকারের খরচসহ) রেজিস্ট্রি করিয়া সমন জারি করাইতে পারিবে এবং আবেদনকারীকে উহার খরচ বহন করিতে হইবে । বিধি-৯ : (১) প্রতিবাদীর প্রতি সমন ২নং ফরমে দিতে হইবে । (২) সাক্ষীর প্রতি সমন ৩নং ফরমে দিতে হইবে । বিধি-১০ : প্রতিবাদীর উপর সমন জারি হইবার পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পক্ষগণকে সাত দিনের মধ্যে তাহাদের সদস্য মনোনয়ন করিতে বলিবে, এবং অনুরূপভাবে মনোনীত সদস্যবৃন্দ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে লইয়া গ্রাম আদালত গঠিত হইবে । বিধি-১১ : সদস্যগণের নাম প্রাপ্ত হইবার পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ১নং ফরমের রেজিস্টারের সংক্ষিপ্ত কলামে উক্ত সদস্যগণের নাম লিপিবদ্ধ করিবে । বিধি-১২ : (১) যেক্ষেত্রে গ্রাম আদালত কোনো মামলা কোনো মামলার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পূর্বে যেকোনো সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ৫ ধারার (২) উপধারায় বর্ণিত কোনো কারণে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ করিতে অপরাগ হয়, অথবা কোনো পক্ষ তাহার নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে, সেই ক্ষেত্রে থানা নির্বাহী অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট হইতে সংবাদ পাইলে অথবা কোনো পক্ষের নিকট হইতে লিখিত দরখাস্ত পাইলে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের যেকোনো সদস্যকে কোনো পক্ষ যে সদস্যকে তদীয় সদস্যরূপে মনোনীত করিয়াছে সেই সদস্য (ব্যতীত) নিযুক্ত করিতে পারিবেন । (২) উপবিধি (১) অনুসারে গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত থানা নির্বাহী অফিসার গ্রাম আদালতের কার্যক্রম স্থগিত রাখিতে পারিবেন । (৩) উপবিধি (১) অনুসারে নিযুক্ত গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের নাম ১নং ফরম রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে । বিধি-১৩ : গ্রাম আদালত গঠিত হইবার পর গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান তিন দিনের মধ্যে দরখাস্তের বিরুদ্ধে লিখিত আপত্তি দাখিল করার জন্য প্রতিবাদীকে নির্দেশ দিবেন এবং গ্রাম আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠানের জন্য একটি দিন সময় ও স্থান ধার্য করিবেন এবং পক্ষগণকে নিজ নিজ বক্তব্যের সমর্থনে প্রযোজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করার নির্দেশ দিতে পারিবেন । বিধি-১৪: (১) গ্রাম আদালত ১৩ বিধি অনুসারে ধার্য তারিখে মামলার বিচার করিবে, কিন্তু উপযুক্ত কারণে আদালত বিভিন্ন সময়ে মামলার শুনানি মুলতবী করিতে পারিবে, তবে একেবারে অনুরূপ মুলতবীর মেয়াদ সাত দিনের অধিক হইবে না । (২) গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান সাক্ষীগণকে হলফ বা শপথ করিয়া জবানবন্দি করিতে বলিবেন এবং জবানবন্দির সারমর্ম লিপিবদ্ধ করিবেন বা করাইবেন । (৩) গ্রাম আদালত কোনো বিষয় সম্পর্কে পক্ষগণের মধ্যে বিরোধের ব্যাপারে মামলার যেকোনো পর্যায়ে সরেজমিনে তদন্ত অনুষ্ঠান করিতে পারিবে । বিধি-১৫ : (১) যদি কোনো মামলায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট হাজির হওয়ার জন্য নির্ধারিত তারিখে, অথবা গ্রাম আদালতে মামলার শুনানির জন্য নির্ধারিত তারিখে বাদী হাজির না হয়, এবং ইউনিয়ন পরিষদের বা গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান যদি এইরূপ মত পোষণ করেন যে, বাদী তাহার মামলা পরিচালনায় গাফিলতি করিতেছে তবে তাহার ত্রুটির জন্য দরখাস্ত খারিজ করা হইবে । (২) যেক্ষেত্রে উপবিধি (১) অনুসারে দরখাস্ত খারিজ হয়, সেইক্ষেত্রে মামলা পুনর্বহাল করার জন্য বাদী মামলা খারিজের তারিখ হইতে ১০ দিনের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের বা গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যানের নিকট লিখিতভাবে আবেদন করিতে পারিবে, এবং উক্ত চেয়ারম্যান যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, আবেদনকারী হাজির না হওয়ার উপযুক্ত কারণ ছিল এবং সে অবেহলার সহিত কাজ করেন নাই, তবে চেয়ারম্যান আবেদনকারীর দরখাস্ত পুনর্বহাল করিতে ও উহা শুনানির জন্য একটি তারিখ ধার্য করিতে পারিবেন । বিধি-১৬ : (১) যদি কোনো মামলা গ্রাম আদালতে শুনানির জন্য ধার্য তারিখে প্রতিবাদী হাজির না হয়, এবং গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান যদি এইরূপ মত পোষণ করেন যে, সে গাফিলতি করিয়াছে, তবে প্রতিবাদীর অনুপস্থিতিতেই মামলার শুনানি করিয়া নিষ্পত্তি করা হইবে । (২) যেক্ষেত্রে কোনো মামলায় উপবিধি (১) অনুসারে প্রতিবাদীর অনুপস্থিতিতেই শুনানি অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রতিবাদীর বিরুদ্ধে নিষ্পত্তি হয়, সেই ক্ষেত্রে প্রতিবাদী মামলা পুনর্বহাল করার জন্য উক্ত সিদ্ধান্তের তারিখ হইতে ১০ দিনের
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস